ব্রাহ্মণবাড়িয়া নামটি কিভাবে এলো
হাজার বছরের সংস্কৃতি ও ইতিহাস-ঐতিহ্যেরহৃদয়ভূমি আমাদের এই প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশ। এদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের রয়েছে সমৃদ্ধ ইতিহাস। বাংলাদেশের যে অঞ্চলসমূহ সংগীত, শিল্প-সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে স্বমহিমায় উজ্জ্বল হয়ে আছে তার মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা অন্যতম। এই জেলাকে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী বললে বোধ হয় বেশি বলা হবে না। তিতাস বিধৌত ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংগীত, শিল্প সাহিত্য, শিক্ষা ও সংস্কৃতির তীর্থ ক্ষেত্র রূপে ভারতীয় উপমহাদেশে সুপরিচিত একটি জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া।গানের দেশ গুনীর দেশ ব্রাহ্মণবাড়িয়া যেন জ্ঞানী-গুনীর খনি স্বরূপ। অসংখ্য জ্ঞানী-গুনীর বিভিন্ন অবদানের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া উপমহাদেশব্যাপী ও বিশ্বব্যাপী আজ পরিচিত।নদী-মাতৃক বাংলাদেশের মধ্য- পূর্বাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী তিতাস-বিধৌত জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া।ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নামকরণ নিয়ে একাধিক মত রয়েছে।শোনা যায়, সেন বংশের রাজত্বকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়অভিজাত ব্রাহ্মণকুলের অভাবে পূজা-অর্চনায় বিঘ্ন সৃষ্টি হতো। এ কারণে রাজা লক্ষণ সেন আদিসুর কন্যকুঞ্জ থেকে কয়েকটি ব্রাহ্মণ পরিবারকে এ অঞ্চলে নিয়ে আসেন। তাদের মধ্যে কিছু ব্রাহ্মণ পরিবার শহরের মৌলভী পাড়ায় বাড়ী তৈরী করে। সেই ব্রাহ্মণদের বাড়ীর অবস্থানের কারণে এ জেলার নামকরণ ব্রাহ্মণবাড়িয়া হয় বলে অনেকে বিশ্বাস করেন।অন্য একটি মতানুসারে দিল্লী থেকে আগত ইসলাম ধর্ম প্রচারক শাহ সুফী হযরত কাজী মাহমুদ শাহ এ শহর থেকে উল্লেখিত ব্রাহ্মণ পরিবার সমূহকে বেরিয়ে যাবার নির্দেশ প্রদান করেন , যা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নামেরউৎপত্তিহয়েছে বলে মনে করা হয়।১৮৭৫ সালে নাসিরনগর মহকুমার নাম পরিবর্তন করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা করা হয়। তৎপূর্বেই ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর পৌরসভায় উন্নীত হয়। ১৯৪৭ পরবর্তীসময়ে বৃহত্তর কুমিল্লা জেলা পূর্ব পাকিস্তানের অর্ন্তগত হয়। ১৯৬০ সালে ত্রিপুরা জেলারপূর্ব পাকিস্তান অংশের নামকরণ হয় কুমিল্লা জেলা। তখন ব্রাহ্মণবাড়িয়া একটি মহকুমা শহর নামে পরিচিত ছিল। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ এক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীনতা উত্তর প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণেরসময় ১৯৮৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে জেলা ঘোষণা করা হয়।পূর্ব ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সীমান্ত সংলগ্ন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়১৮৬০ ইং সালে মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুতে ত্রিপুরা জেলার অর্ন্তভূক্ত ছিল। ভারত বিভাগের পর কুমিল্লা জেলার একটি মহকুমা হিসেবে থাকে। ১৯৮৪ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারী জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৮৬৯ সালে শহরটি পৌরসভায় রূপান্তর হয়। উনবিংশ শতাব্দীতে এ শহরের উত্থান।ঈসা খাঁর প্রথম ও অস্থায়ী রাজধানী ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর থেকে ১০ কিমি উত্তরে সরাইলে। এ জেলায় ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ কেন্দ্র করে স্বদেশী আন্দোলন শুরু হলে বিপ্লবী উল্লাস কর (অভিরাম) দত্ত কর্তৃক বোমা বিস্ফোরণের অভিযোগে আন্দামানে দীপান্তরিত হয়েছিল। ১৯৩১ সালের ১৪ ডিসেম্বর তারিখে সুনীতি চৌধুরী, শান্তি ঘোষ ও গোপাল দেব প্রকাশ্য দিবালোকে তদানীন্তন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সি.সি.বি স্টিভেনসকে তারই বাসগৃহে গুলি করে হত্যা করে। ১৯৩০ সালে কৃষক আন্দোলনের সময় কংগ্রেস নেতা আব্দুল হাকিম খাজনা বন্ধের আহ্বান জানান। এ সময় ব্রিটিশ সৈন্যদের বেপরোয়া গুলিবর্ষণে চারজন বেসামরিক লোক নিহত হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল আখাউড়ার দরুইন যুদ্ধে শহীদ হন।ব্রিটিশ আমলে ইংরেজ ম্যানেজার মি হ্যালিডের কুঠি সরাইল থেকে শহরের মৌড়াইলে স্থানান্তরিত হয়। বর্তমানে এটি ভেঙ্গে সরকারি অফিস ঘর করা হয়েছে। ১৮২৪সালে ব্রিটিশ সৈন্যদের মুনিপুর অধিকারের সময়ে তাদেরসামরিক সদর দফতর ছিল এ শহরে।২. অবস্থানব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ১৯৮৪ সালেপ্রতিষ্ঠিত হয়। এর পূর্বে এই জেলা কুমিল্লা (পুরাতন নাম টিপরা) জেলার অন্তর্ভূক্ত ছিল। উল্লেখ্য ১৮৩০ সালের পূর্বে সরাইলপরগণা ময়মনসিংহ জেলার অন্তর্ভূক্ত ছিল।এ অঞ্চল প্রাচীন বাংলার সমতট নামক জনপদের অংশ ছিল।মধ্যযুগে আজকের ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছিল সরাইল পরগনার অর্ন্তগত। ঐতিহাসিক তথ্য উপাত্তে জানা যায় পাঠান সুলতান শেরশাহ রাজস্ব আদায় ও শাসন কার্য পরিচালনার সুবিধার্থে প্রথম পরগনার সৃষ্টি করেন। সুলতানী আমলেই সরাইল পরগনার সৃষ্টি হয়। রাজনৈতিক কারণে সরাইল পরগনা কখনো কখনো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে। বাংলার বার ভূইয়ার শ্রেষ্ঠ ভূইয়া মসনদ-এ আলা ঈসা খাঁর বংশ পরিচয় থেকে জানা যায় ভারতের বাইশওয়ারা রাজ্যের এক যুবরাজ কালিদাস গজদানী সৈয়দ ইব্রাহীম মালেকুলউলামা (রাঃ) এর নিকট ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে সোলায়মান খাঁ নাম ধারণ করেন।সোলায়মান খাঁ ১৫৩৪ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গে আগমন করেন। তিনি সুলতান গিয়াস উদ্দিন মাহমুদ শাহের পরথেকে সর্বপ্রথম সরাইল পরগনার জায়গীর প্রাপ্ত হন। সোলায়মান খাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী পাঠান বাহিনী মিথ্যা সন্ধির প্রস্তাবে ডেকে নিয়ে তাকে হত্যা করে। এ সময়ে ঈসা খাঁর বয়স ছিল দশ বছর। পরবর্তীতে স্বীয় প্রতিভা বলে তিনি ভাটীরাজ্যের এক বিরাট শক্তিতে পরিণত হন। ভাটী রাজ্যের স্বাধীনতা রক্ষায় ঈসা খাঁর সঙ্গে মোঘল বাহিনীর যাদ্ধ ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ রয়েছে। ঈসা খাঁ সে সময়ে সরাইলে অস্থায়ী রাজধানী স্থাপন করেন। ১৫৮১ খ্রিস্টাব্দের দিকে তিনি ভাটীরাজ্যের একচ্ছত্র অধিপতি রূপে তাঁর শাসনকেন্দ্র সরাইল থেকে রসানার গাঁয়ে এবং সাময়িক ক্ষেত্রে কিশোরগঞ্জের জঙ্গল বাড়িতে স্থানান্তরকরেন।১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে ত্রিপুরা জেলা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়ারঅধিকাংশ এলাকা ময়মনসিংহ জেলার অর্ন্তভূক্তছিল।১৮৩০ সালে সরাইল, দাইদপুর, হরিপুর, বেজুরা ও সতরকন্ডল পরগনা, ময়মনসিংহ হতে ত্রিপুরা জেলার কাছে হস্তান্তরকরা হয়। ১৮৬০ সালে নাসিরনগর মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া অধিকাংশ এর অধীনস্থ হয়।৩. ভূ প্রাকৃতিক অবস্থাব্রাহ্মণবাড়িয়ারভৌগলিক অবস্থান বাংলাদেশের পূর্ব সীমান্তে। আদিকাল থেকে নদ-নদী অধ্যুষিত ভাটীরাজ্য বলেই পরিচিত। স্রোতস্বিনী মেঘনা অববাহিকায় কালীদহ সায়রের পলি ও বালি সঞ্চিত নীচুভূমি ব্রাহ্মণবাড়িয়ারঅধিকাংশ অঞ্চল। তবে উত্তর পূর্বাঞ্চলে কিছু উঁচু ভূমির নিদর্শণ রয়েছে। পাহাড়ি টিলার লালমাটি আদি স্থলভূমি ও জনপদের প্রমাণ বহন করে। তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ারদক্ষিণ পূর্বাংশের অধিকাংশ এলাকা এখনো বর্ষার পানিতে প্লাবিত হয়ে থাকে। মেঘনা, তিতাস, সালদা, হাওড়া, বুড়ি ও লোহুর নদী বষার্কালে এখনো উপচে উঠে। প্রাচীন কাল থেকে সরাইল, হরষপুর, সুলতানপুর, কসবা ও নবীনগরের কিয়দংশ দ্বীপাঞ্চলের মতো বাস উপযোগী ছিল বলে ধারণা করা হয়। সময়ান্তরে ব্যাপক ভৌগোলিক বিবর্তন ঘটেছে।ব্রাহ্মণবাড়িয়ারপূর্বে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে। দক্ষিণে কুমিল্লা জেলা পশ্চিমে নরসিংদী ও কিশোরগঞ্জজেলা এবং উত্তরের সিলেটের হবিগঞ্জ জেলার অবস্থান।ভৌগোলিকভাবে জেলাটি ৯০ ডিগ্রি ৪৫র্ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ থেকে ৯১ ডিগ্রি ১৫র্ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ এবং ২৩ ডিগ্রি ৪০র্ উত্তর অক্ষাংশ থেকে ২৪ ডিগ্রি ১৫র্ উত্তর অক্ষাংশ অবস্থিত।৪. জলবায়ুজেলার জলবায়ু সাধারণত আর্দ্র হলেও নাতিশীতোষ্ণ এবং স্বাস্থ্যপ্রদ। বার্ষিক সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত ১১৪ দশমিক ৬৫ ইঞ্চি ও সর্বনিম্ন ৫৬ দশমিক ৪৩ ইঞ্চি। গড় বৃষ্টিপাত ৭৮ দশমিক ০৬ ইঞ্চি। ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী জেলার লোকসংখ্যা ২৩ লাখ ৭৭ হাজার ৯৮০ জন। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটার ১২৩৪ জন। ঘনত্বের বিচারে জেলার অবস্থান নবম। জেলার পরিবারের সংখ্যা ৪ লাখ ২৩ হাজার ৭শ' ৮০টি।৫. মৃত্তিকাব্রাহ্মণবাড়িয়ারবহুলাংশ এখণ জন-বসতির উপযোগী সমতলভূমি। তবে আদিতে এ অঞ্চলের অবস্থা কেমন ছিল তার পুরো চিত্র এখন আর কল্পনা করা যায় না। ত্রিপুরার পার্বত্য ভূমির প্রান্তে মেঘনার বুকে জেগে উঠা চরের অবস্থানেই আদি সমতটরাজ্য গড়ে উঠেছিল বলে ধারণা করা হয়।৬. উদ্ভিদনদ-নদী, হাওড়-বাওর এবং চিরশ্যামলীমার দেশ ব্রাহ্মণবাড়িয়া।বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ, গাছপালার সবুজে ঢাকা গ্রাম, রাখালের মেঠো সুর আর মাঝির কণ্ঠে ভাইয়ালি গান। নাসিরনগর থেকে বাঞ্চারামপুর আবহমান নিসর্গের পরিচিত দেশ। মেরাসানী, হরষপুর, আজমপুরের পাহাড়ী লাল মাটিতে প্রকৃতির এক ভিন্ন বৈচিত্র্য। সরাইল ও কসবায় আদি বসতির অনেক স্থাপত্য, তিতাসের রূপ সুধায় মুগ্ধ আখাউড়া-নবীনগর, মেঘনার তীরে বাণিজ্য বসতি আশুগঞ্জ; ঐশ্বর্যে সংস্কৃতিতে রত্ন গর্ভা নবীনগর। আনাদি অপত্যস্নেহে তিতাস চিরকাল ঘিরে রেখেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে। প্রকৃতি তার অঢেল উপঢৌকনে, সহায়ে সম্পদে অমরাবতী করেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে।৭. ভূমির ব্যবহারজেলার চাষযোগ্য জমির পরিমাণ ১ লাখ ৫২ হাজার ২শ' ৮০ হেক্টর, পতিত জমি ৭শ' হেক্টর, এক ফসলি ২৮ দশমিক ৩৮ ভাগ দো-ফসলি ৫৩ দশমিক ৯৫ ভাগ, তিন ফসলি ১৭ দশমিক ৬৭ ভাগ। সেচের আওতায় আবাদি জমি ৫৫ দশমিক ৩১ ভাগ। ভূমিহীন ১১ শতাংশ। মাথাপিছু আবাদি জমি ০.০৭ হেক্টর। জেলায় অন্যান্য জেলার মতো কৃষি ফসল ও ফল-ফলাদি পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায়। জেলায় মৎস্য খামার ৬৪টি, গবাদি পশু ৬১, হাঁস-মুরগি ৮৩, হ্যাচারি ৪৩, নার্সারি ১৭ ইত্যাদি। জেলার মোট বনাঞ্চলের পরিমাণ ৪ হাজার ৪শ' ৮৫ একর।৮. স্থানটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য- বসতি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, পার্ক, শিল্প, ব্যবসা বানিজ্য, উপজীবিকা, শিক্ষার হার ইত্যাদি।শিল্প-সংস্কৃতি,শিক্ষা-সাহিত্যেদেশের অন্যমত অগ্রণী জনপদ ব্রাহ্মণবাড়িয়া।সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁ, ব্যারিস্টার এ রসুল, নবাব স্যার সৈয়দ শামসুল হুদা, কথা সাহিত্যিক অদ্বৈত মল্ল বর্মণ, কবি আবদুল কাদির, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তসহ বহু জ্ঞানী গুনীর জন্মধন্য জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া।শহরের বাণিজ্য কেন্দ্র আনন্দবাজার ও টানবাজার। আনন্দবাজার, টানবাজার, জগৎবাজার, মহাদেব পট্টি, কালাইশ্রী পাড়া, মধ্যপাড়া, কাজীপাড়া ও কান্দিপাড়া শহরের পুরাতন এলাকা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর শিল্প-সাহিত্য ও শিক্ষা-সংস্কৃতির ঐতিহ্য সুপ্রাচীন। এ শহরকে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী বলা হয়।ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জাতীয় অর্থনীতিতেও ব্যাপক অবদান রাখছে। তিতাস গ্যাস ফিল্ড, সালদা গ্যাস ফিল্ড, মেঘনা গ্যাস ফিল্ড দেশের এক-তৃতীয়াংশ গ্যাস সরবরাহ যোগায়। আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র দেশের ২য় বৃহত্তম বিদ্যুৎউৎপাদন কেন্দ্র। আশুগঞ্জ সার কারখানা দেশের ইউরিয়া সারের অন্যতম বৃহত্তম শিল্প কারখানা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শিল্প সংস্কৃতির ধারক ও বাহক এবং দলমত নির্বিশেষে ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল মিলন মেলা হিসেবে এ দেশের মানচিত্রে বিশেষ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত।জেলার আশুগঞ্জে সার কারখানা ও বিদ্যুৎ কেন্দ্র আছে। জেলার কয়েক শতাব্দী ধরে তাঁত বস্ত্রের জন্য বিখ্যাত। উনবিংশ শতাব্দীতে সরাইলে তানজেব নামক বিখ্যাত মসলিন বস্ত্র তৈরি হতো।বৃটিশ আমল থেকে রাধিকার বেতের টুপি তৈরি হচ্ছে। জেলার চম্পকনগরে নৌকা তৈরি হয়। প্রাকৃতিক গ্যাসের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিখ্যাত। জেলার তিনটি গ্যাস ফিল্ড রয়েছে। এ তিনটি গ্যাস ফিল্ড হচ্ছে- তিতাস, মেঘনা ও সালদা নদী গ্যাস ফিল্ড। বলতে গেলে দেশের অন্যতম চালিকা শক্তি ব্রাহ্মণবাড়িয়ারগ্যাস। জেলার ১৯৮৫ সালেই গড়ে উঠেছে বিসিক শিল্পনগরী।ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরে উল্লেখযোগ্য খেলার স্থানসমূহ হলো –নিয়াজ মোহাম্মদ স্টেডিয়াম, কাউতলী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া,নিয়াজ মোহাম্মদ স্কুল মাঠ প্রাঙ্গন,কলেজপাড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া,অন্নদা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় বডিং মাঠ, হালদারপাড়া ইত্যাদি।জেলার শিক্ষার হার ৫২ দশমিক ৩ ভাগ। জেলায় রয়েছে সরকারি কলেজ ২টি। বেসরকারি কলেজ ৩৯টি, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৭টি, বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়১৪৪টি, মাদরাসা ১২৪টি, মক্তব ২ হাজার ৩১৪টি, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৬৯০টি, বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৩২৩টি, পিটিআই ১টি, ল'কলেজ ১টি, নার্সিং ইন্সটিটিউট ১টি, মুক-বধির বিদ্যালয় ১টি, ভোকেশনাল ট্রেনিং ইন্সটিটিউট ২টি, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল ১টি সংগীত স্কুল ২টি, হোমিও কলেজ ১টি ইত্যাদি।জেলায় হাসপাতাল রয়েছে ৩১টি, টিবি ক্লিনিক ১টি, কমিউনিটি ক্লিনিক ২৪৩টি, বেসরকারি ক্লিনিক ১৮টি, পশু চিকিৎসা কেন্দ্র ৭টি। জেলার পশু-পাখি কল্যাণ কেন্দ্র রয়েছে ২৪টি। এছাড়াও জেলায় রয়েছে ১২০টি বিভিন্ন ব্যাংকের শাখা। ডাকঘর আছে ১৫২টি।তিতাস নদীর শান্ত প্রকৃতি দেখার মত একটি স্থান। এছাড়া তিতাস গ্যাস ফিল্ড পরিদর্শন করার মত একটি স্থান। আশুগঞ্জ ও ভৈরব বাজারের মধ্যবর্তী মেঘনা নদীর উপর ভৈরব রেলওয়ে সেতু তৈরি হয়েছে তা যে কারও মনে দোলা দেবে। এর পাশ ঘেষেই বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য মৈত্রী সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এরফলে পূর্বের ফেরিঘাটের তুলনায় প্রায় ২ ঘন্টা সময় সাশ্রয় হয়েছে এবং পূর্বাঞ্চলের সাথে ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিরাট বিপ্লব ও উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে।এছাড়াও, আরাফাইল মসজিদ (সরাইল), উলচাপাড়া মসজিদ (সদর), ভাদুঘর শাহী মসজিদ (সদর), কালভৈরব মন্দির (সদর),সৈয়দ কাজি মাহমুদ শাহ মাজার কাজিপাড়া (সদর), বাসুদেব মূর্তি (সরাইল), ঐতিহাসিক হাতিরপুল (সরাইল), খরমপুর মাজার (আখাউড়া), কৈলাঘর দূর্গ (কসবা), কুল্লাপাথর শহীদ স্মৃতিসৌধ (কসবা), বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের কবর (আখাউড়া), সৌধ হিরন্ময়, শহীদ মিনার, তোফায়েল আজম মনুমেন্ট, শহীদ স্মৃতিসৌধ, মঈনপুর মসজিদ (কসবা), বাঁশী হাতে শিবমূর্তি (নবীনগর), আনন্দময়ী কালীমূর্তি (সরাইল) ইত্যাদি এবং আর্কাইভ মিউজিয়াম অন্যতম।